‘এরকম গ্রামোত আসিয়া হামাক মেলা কিছু জানাইলেন’—উঠান বৈঠক শেষে এমনই অনুভূতি ফাতেমা আক্তারের।
দিনাজপুরের সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের গৃহিণী ফাতেমা আক্তার। তাঁর বাড়ি বেলবাড়ী আশ্রয়নপাড়া গ্রামে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সচেতনতামূলক নানা তথ্য খোঁজার পাশাপাশি ঘরে বসেও যে আয় করা যায়—বিষয়টা জেনে বেশ অবাক হয়েছেন। এখন তিনি ইন্টারনেটে সার্চ করে বিভিন্ন তথ্য বের করতে পারেন। পরিবারের সবার পাশাপাশি নিজের যত্নের প্রতিও ফাতেমা বেশ সচেতন। কারণ উঠান বৈঠকে ভিডিও দেখে স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা তথ্য জেনেছেন তিনি। বিশেষ করে মা ও শিশুর যত্নে করণীয়, পুষ্টিকর খাবারের বিষয়, নারীদের কয়েকটি রোগের উপসর্গ ও প্রতিকারে করণীয়—সম্পর্কে তিনি এখন আগের চেয়ে বেশ জানেন।
শবনম মুস্তারীনের জীবনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষকতা। উঠান বৈঠকের পর এখন তিনি পাশাপাশি উপস্থাপকও হতে চান।
দিনাজপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩২ টি উঠান বৈঠক সঞ্চালনা করেছেন শবনম মুস্তারীন। সঞ্চালক শবনমও আগে ইন্টারনেটে কিছু খুঁজতে হলে শব্দ লিখতেন। তবে উঠান বৈঠকে যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনিও তথ্য খোঁজার কাজটা কথা বলেই (ভয়েস কমান্ড) বেশি করছেন।
‘যহন আমি পুরস্কারটা লইতেছিলাম তহন আমার ফরিবারের সবই আমার দিকে চাইয়া হাততালি দিতাছে। মনে হইছে, অতোদিনে আমি কিছু একটা করতাম পারছি।’—স্মার্টফোন জেতার পর ফিরোজার অনুভূতি।
ফিরোজা আক্তার সাথী একজন গৃহিনী। স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ চারজনের পরিবার। স্বামীর আয়ে সংসার চললেও, নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চান না তিনি। উঠান বৈঠকে এসে পেয়েছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনুপ্রেরণা। সেই লক্ষ্যে উঠান বৈঠকে পুরস্কার হিসেবে জেতা স্মার্টফোনে সময় পেলেই ঘুরছেন ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। দেখছেন গ্রামে বসেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করা নারীদের সফলতার গল্প। পাচ্ছেন উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস ও উৎসাহ। তাঁর পরিবারের বিশ্বাস, ভবিষ্যতে গ্রামীণ নারীদের ইন্টারনেটবিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণ–আয়োজনে বলা হবে ফিরোজা আক্তার সাথীর সফলতার গল্পও।
ইন্টারনেটে সফল উদ্যোক্তাদের ভিডিও দেখে নিজের পেজটাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাইফার।
উঠান বৈঠকে এসে উপকৃত হয়েছেন সাইফা সুলতানা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের হকতুল্লা গ্রামে থাকেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে থ্রিপিস, টি–শার্ট, প্রসাধনী ইত্যাদির ব্যবসা করেন তিনি। উঠান বৈঠকে দেখানো ভিডিওতে দেখেছেন বিভিন্ন নারীর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প। সাইফাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি খুব ব্যস্ত। তার দীর্ঘদিনের শখ পূরণ হওয়ার পথে। স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামলাচ্ছেন নিজের ব্যবসা। স্মার্টফোনে চোখ বোলাচ্ছেন আর ক্রেতাদের অর্ডার লিখে রাখছেন।
উঠান বৈঠকে এসে আইশা আক্তার জেনেছেন ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’। এর ইতিবাচক ব্যবহার করে সফল উদ্যোক্তা হতে চান তিনি। তাই এসেছেন 'ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার' প্রচারাভিযানের আওতায় সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে চলা উঠান বৈঠকে
টাকার অভাবে পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি আইশা আকতার-এর। কিন্তু উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাই ইন্টারনেটে ব্যবহার করে কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা জানতেই এসেছিলেন আমাদের 'ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার' উঠান বৈঠক আয়োজনে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফুরা বেগম নিজের বানানো পাটির খবর ছড়িয়ে দিতে চান সারাদেশে।
স্বামীর পাশাপাশি নিজেও সংসারের খরচ যোগাতে পাটি বানানোর কাজ করেন। ছেলেমেয়ের কাছে শুনেছেন ইন্টারনেটের ব্যবহার জানলে পাটির বিক্রি আরও বাড়ানো যাবে। দেশের যেকোনো অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া যাবে তার বানানো পাটি। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে কীভাবে পাটি বিক্রি করা যায়, তা জানেন না। তাই এসেছেন 'ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার' উঠান বৈঠকে।